কার্টুন আঁকতে ভালোবাসেন? কিংবা অ্যানিমেশন বানাতে?
কিন্তু এআই এর এই যুগে এ
নিয়ে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং করতে দ্বিধা বোধ করছেন? ‘এআই vs কার্টুনিস্টের’ এই'দ্বন্দ্বে আপাত দৃষ্টিতে বিবেচনা করে
এআই কে আপনি হয়তো শত্রু ভাবছেন, কিন্তু
আসলে কি তাই?
বাস্তবতা
কিন্তু বলছে ভিন্ন কিছু।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কার্টুন তৈরির ক্ষেত্রে
বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটা সত্যি কথা।কিন্তু এআই কি সত্যিই মেধাবী
কার্টুনিস্টদের জায়গা নিতে পারবে? আমাদের গবেষণা বলছে , না!
এই ব্লগে আমরা এমনই ৫টি
কারণ নিয়ে আলোচনা করবো, যা প্রমাণ করে যে এআই কার্টুনিস্টদের জায়গা নিতে পারবে না। কারণ…ব্লগ থেকেই
জেনে নেই।
চলুন, শুরু করি তবে।

১. অনুভূতির
যথার্থ প্রকাশে কে এগিয়ে? AI নাকি কার্টুনিস্ট?
একজন ভালো
কার্টুনিস্টের সবচেয়ে বড় গুণ কি জানেন?
‘গল্প বলার যোগ্যতা’। একজন
কার্টুনিস্ট তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, তার পরিচিত সংস্কৃতি-ঐতিহ্য আর আবেগ দিয়ে তার কাজকে প্রাণ দেয়। আমরা যখন
কার্টুন দেখি, তখন সেটা আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় কারণ
সেখানে লুকিয়ে থাকে কার্টুনিস্টের নিজের হাসি, কষ্ট ,
আবেগ বা হাস্যরস।
একজন
কার্টুনিস্ট কোন গল্প বা চরিত্র, কিংবা প্রেক্ষাপট তৈরির আগে নিজে সেই গল্প, চরিত্র,
প্রেক্ষাপটকে অনুভব করে। যে কারণে, তার তৈরি
অ্যানিমেশন হয় প্রাণবন্ত কিছু যা আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
কিন্তু, এআই কে যখন আপনি কার্টুন বানানোর কমান্ড দেন তখন সে
ডাটা বিশ্লেষণ করে স্টাইল নকল করতে পারে। কিন্তু তার সৃষ্টির মধ্যে সেই আন্তরিকতা,
অঙ্গভঙ্গি, অনুভূতি থাকে না, যেটা শুধু মানুষ সৃষ্ট কন্টেন্টেই থাকতে পারে।
এছাড়া, একজন মানুষ কার্টুনিস্টের সৃষ্টিতে 'সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম' অনেক ডিটেইলিং থাকে যা একটা পারফেক্ট কার্টুন তৈরিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ,
AI কখনোই এতো সূক্ষ্ম কাজ করার সক্ষমতা রাখে না।
২. সৃজনশীলতা
কিংবা নতুনত্ব, মানুষের
মস্তিস্ককে মাত করতে পারে কি এআই?
একজন মানুষ
কার্টুনিস্ট তার কল্পনা, স্কিল ও অভিজ্ঞতার জোরে যে চমৎকার সৃষ্টিশীলতা দেখাতে সক্ষম, সেখান থেকে এখনো অনেকটাই দূরে এআই।
কেন?

ইমেজঃ কালেক্টেড
বুঝিয়ে বলি তবে।
AI যা তৈরি করে,
তা আসলে তার শেখানো ডেটা আর প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে সে বানিয়ে
থাকে। তার নিজের চিন্তা করার শক্তি নেই, তৈরি করারও ক্ষমতা
নেই। নির্দেশ মতো কাজ রেডি করে দেয়ার জন্যই এআই আদেশপ্রাপ্ত। তাও, যদি সেটা সে ঠিকভাবে পারতো। সর্বশেষ, ‘স্টুডিও ঘিবলী’
ট্রেন্ডে এআই এর মিনিটের মধ্যে পিক বানাতে গিয়ে অদ্ভুত পিক বানিয়ে
দেয়ার কাণ্ড, কমান্ড সর্বস্ব এআই এর সীমাবদ্ধতার কথাই মনে
করিয়ে দেয়।
অন্যদিকে,
কার্টুনিস্ট
শুধু কার্টুন বানায় না, সে একদম নতুন এক পৃথিবী বানায়। সেখানে থাকে তার নিজের তৈরি মৌলিক চরিত্র
বা গল্প। সে নিজের মনমতো একে তৈরি করে। গল্প সম্পর্কিত সকল কিছুকে সে নিখুঁত ভাবে
ফুটিয়ে তোলে।
গ্রেভ অফ দ্যা
ফায়ারফ্লাইস, হাউ টু ট্রেইন ইউর
ড্রাগন-এর মতো অ্যানিমেশন মুভিগুলো কার্টুনিস্ট তথা অ্যানিমেটরেরই বন্দনা
জানাচ্ছে। এদিকে ১৯৫৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা এআই আজ অবধি এমন মৌলিক
কিছুই তৈরি করতে পারে নি, যা দেখে মানুষের অনুভূতিতে হাসি,
কান্না কিংবা উভয়ের মিশ্র অনুভূতির তৈরি হবে।
সর্বশেষ, কোন কার্টুন মুভিটি দেখেছিলেন। কমেন্টে জানান।
৩. প্রেক্ষাপট
বুঝে কার্টুন বানানোতে কে সেরা ?
কার্টুন অনেক
রকমের হয়। তাই না? তবে সব কার্টুন কি
কেবলই আমাদের বিনোদনের যোগান দেয়ার জন্য তৈরি হয়। না তো। বেশিরভাগ কার্টুনেই
হাস্যরসের সাথে সামাজিক বার্তা দেয়া হয়। খুবই সূক্ষ্ম ভাবে প্রেক্ষাপট তৈরি করে
গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয় এসব কার্টুন।
মিনা কার্টুন-এর
কথাই ধরুন। ৯০ দশকের শিশুদের মাঝে জনপ্রিয় এই কার্টুন সিরিজ-এর উদ্দেশ্যই ছিলো
সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু গুলো সহজ ও সাবলীল ভাবে বাচ্চাদের মাঝে তুলে ধরা। মজার বিষয়
হচ্ছে, আমাদের সাথে ঘরের বড়রাও যোগ
দিতেন মিনা কার্টুন দেখতে। তৎকালীন স্কুল প্রোগ্রাম গুলোতে ‘যেমন
খুশি তেমন সাজো’ অনুষ্ঠানে মিনা, রাজু
কিংবা মিঠুর মতো সেজে আসা প্রতিযোগীও ছিলো দেখার মতো।
এদিকে, এআই এই প্রেক্ষাপট না পুরোপুরি ধরতে পারে আর না বুঝতে
পারে। উল্টো সে হয়তো ভুল বুঝে এমন কিছু তৈরি করে ফেলবে যা অপ্রাসঙ্গিক অথবা
আপত্তিকর। কিন্তু, এমন ভুল মানুষের দ্বারা হবে না। উল্টো সে
সমাজের সমস্যাগুলো গভীরভাবে বুঝে তার কাজটিকে আরও সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে
তার নিজের তৈরি কার্টুনের মাধ্যমে।
একজন
কার্টুনিস্ট বা অ্যানিমেটর সময় নেবে তার কন্টেন্টকে পারফেক্ট থেকে আরও পারফেক্ট
করতে। অন্যদিকে এআই-এর তৈরি কনটেন্টে সময় যায় তাকে কমান্ড ঠিক ঠাক বোঝাতেই।
৪. ভুল থেকে
দারুণ কিছু গড়তে কিংবা দর্শকদের সাথে সংযোগ করতে AI কি কার্টুনিস্টের চেয়ে এগিয়ে?
আমাদের
আঁকায় মাঝে মাঝেই ছোটখাটো অনেক ভুল থেকে যায়, তাই না? যত দক্ষ হয়েই যাই না কেন, দেখা
যায় যে কখনো একটা লাইন বেঁকে
যায় বা রং একটু ছড়িয়ে যায়।
কিন্তু, জানেন কি?এই অপূর্ণতাই কার্টুনটিকে আরও ইউনিক করে
তোলে, যাতে থাকে অন্যরকম এক শৈলী।
তবে, এআই সবসময় নিখুঁত ফলাফল দেওয়ার চেষ্টা করে, যা কখনো কখনো কার্টুনকে যান্ত্রিক আর প্রাণহীন করে ফেলে। দর্শকরা মানুষের
এই ছোট ভুলগুলোর মধ্যে একটা আন্তরিকতা খুঁজে পায়, যা এআই-এর
নিখুঁত কাজে থাকে না।
এছাড়া,
কার্টুনিস্টরা
প্রায়ই দর্শকদের প্রতিক্রিয়া থেকে আইডিয়া নিয়ে থাকেন। এতে তারা আরও ভালো কিছু
তৈরি করার প্রত্যয় খুঁজে পান। ধরুন, একটা কার্টুন সিরিজের চরিত্র দর্শকদের পছন্দ না হলে, কার্টুনিস্ট সেটা বদলে ফেলতে পারে বা নতুন কিছু যোগ করতে পারে।
‘ডোরেমন’,‘শিনচ্যান’,‘টম এন্ড জেরি’-এর কিছু কিছু সিন এমনকি শেষপর্বও দর্শকের চাহিদামতো কয়েকবার বদলে ফেলতে
হয়েছিলো।এআই এই ধরনের সরাসরি মিথস্ক্রিয়া বা দর্শকের মুখের
হাসি-কান্না থেকে শেখার ক্ষমতা রাখে না। মানুষের সাথে মানুষের মতো এই সংযোগ তৈরির
ক্ষমতা এআই-এর সাধ্যের বাইরে।
৫. ব্যক্তিগত
স্বকীয়তার
জায়গায়
AI নাকি
কার্টুনিস্ট, কে এগিয়ে?
বিখ্যাত
কার্টুনিস্টদের নাম শুনলেই আমরা তাদের কার্টুনের স্টাইল আর জনার চিনতে পারি, যেমন
ওয়াল্ট ডিজনিবা ওসামু তেজুকা। তাঁদের কাজে তাঁদের ব্যক্তিত্বের ছাপ থাকে, যেটা দর্শকরা গভীরভাবে উপলব্ধি করে। এআই যতই ভালো কাজ করুক, তার মধ্যে সেই ব্যক্তিগত ছোঁয়া বা প্রাণ থাকে না।
তাই, সবাই যদি গণহারে ‘এআই
কার্টুনিস্ট’ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে
কার্টুন চরিত্রগুলোর আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য থাকবে না। পুনশ্চ এটাই প্রমাণিত হয় যে,
এআই অন্যের কাজ, অঙ্কনশৈলী নকল করতে সক্ষম
হলেও, নিজে থেকে বিচিত্র কিছু সৃষ্টি করতে অপারগ।
পরিশেষে,
যখন ফটোগ্রাফির
আবির্ভাব হয়েছিলো, তখনও এমন একটা আশঙ্কা
জেগেছিলো যে হয়তো অঙ্কন শিল্পের সমাপ্তি খুব সন্নিকটে। বিশেষত পরিবেশবাদী ও
বাস্তবসম্মত চিত্র যারা অঙ্কন করতেন তাদের ক্যারিয়ার হয়তো ঝুঁকিতে পরবে। কিন্তু,
দেখা গেলো যে, আঁকিয়েদের উল্টো উপকার করে দিল
আলোকচিত্র শিল্পীরা।
AI দ্রুত আপনাকে হয়তো
বিভিন্ন টাইপের কার্টুন খুব কম সময়ে বানিয়ে দিতে পারে। কিন্তু, প্রফেশনাল পর্যায়ে তাকে কেবল অন্যান্য টুলস গুলোর মতোই ব্যবহার করতে হবে। AI
দিয়ে প্রফেশনাল পর্যায়ে সম্পূর্ণ কাজ করা মূলত কার্টুন চিত্রের মূল
সৌন্দর্য, যেমন- গল্প বলার ধরণ, অঙ্গভঙ্গি,
ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি প্রকাশের সৌন্দর্য নষ্ট করবে।
AI-সর্বোচ্চ আপনার শিল্পকে আরও সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারবে, কিন্তু আপনার মেধা, আপনার চিন্তাশক্তি কিংবা
সৃজনশীলতাকে প্রতিস্থাপনের ক্ষমতা AI-এর নেই। তাই, AI
কার্টুনিস্টদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করবে, কিংবা
শিল্পটাকেই ধ্বংস করে দেবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। AI vs Human Cartoonist এর বাকযুদ্ধটাও কেবলই সময়ক্ষেপণ।
আপনি যদি আপনার আঁকা
কার্টুনকে প্রাণবন্ত করতে চান, চরিত্র গুলোকে হাঁটতে,
হাসতে, কথা বলতে দেখতে চান তবে ‘অ্যানিমেশন’-এর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম।
যদি লিজেন্ডারি কার্টুন
‘টম এন্ড জেরি’, ‘গোপাল ভাঁড়’ ইত্যাদি জনপ্রিয় কার্টুনের মতো ২ডি কার্টুন অ্যানিমেশন তৈরি করতে চান তবে
বিদ্যাবাড়ি আইটির ‘2D Cartoon Super Animation Blueprint’ কোর্সটি আপনার জন্যই। কোর্সটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন এখানে।
আপডেটেড থাকুন, স্কিল বৃদ্ধি করুন।
হ্যাপি
কার্টুনিং!!
এমন আরও ব্লগ
পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
Comments